জনবান্ধব হাসপাতাল গঠনে একসাথে এগিয়ে চলার অঙ্গীকার - কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে জনমত সভা

জনবান্ধব হাসপাতাল গঠনে একসাথে এগিয়ে চলার অঙ্গীকার - কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে জনমত সভা

  • September 14, 2025
জনবান্ধব হাসপাতাল গঠনে একসাথে এগিয়ে চলার অঙ্গীকার - কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে জনমত সভা

কুড়িগ্রাম, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫:

কুড়িগ্রাম ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল হলরুমে আজ অনুষ্ঠিত হলো একটি জনমত সভা, যেখানে হাসপাতালের সেবার মানোন্নয়ন ও স্বাস্থ্যসুরক্ষা নিশ্চিতকরণে নাগরিকদের মতামত ও প্রত্যাশা তুলে ধরা হয়।

সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা স্বাস্থ্য অধিকার ফোরামের সভাপতি ও সাবেক সিভিল সার্জন ডা. এস. এম. আমিনুল ইসলাম। প্রধান অতিথি ছিলেন কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. নুর নেওয়াজ আহমেদ।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের জেলা সভাপতি ও শিক্ষাবিদ মোছা. রওসন আরা চৌধুরী, শিক্ষাবিদ প্রতিমা রায় চৌধুরী, সুশীল সমাজ প্রতিনিধি মো. মাজেদ আলী, সাংবাদিক মো. জাহেনুর রহমান (প্রথম আলো), ফজলে ইলাহী স্বপন (দৈনিক জনতা), জেলা স্বাস্থ্য অধিকার ফোরামের সহসভাপতি মিসেস মালা দেব এবং অন্যান্য অতিথিবৃন্দ।

সভাটি পরিচালনা করেন সলিডারিটির ফোকাল পার্সন কমলা রানী পাল, সহযোগিতা করেন কো-ফোকাল সুনীল কুমার দাস।

প্রধান আয়োজক ছিল বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ এবং সলিডারিটি।

সভাটি শুরু হয় শুভেচ্ছা বিনিময়ের মধ্য দিয়ে, যেখানে সলিডারিটির ফোকাল পার্সন কমলা রানী পাল উপস্থিত সকল অতিথিকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ২০২১ সাল থেকে বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ কুড়িগ্রাম ও উলিপুর উপজেলায় হাতিয়া ইউনিয়নের সব কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে বিভিন্ন অ্যাডভোকেসি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। সেই ধারাবাহিকতায় আজ জেলা সদর হাসপাতালে এই অংশীজন সভার আয়োজন করা হয়েছে, যাতে হাসপাতালের সার্বিক সেবা, সীমাবদ্ধতা ও জনগণের প্রত্যাশা জানা যায়।

পরবর্তীতে বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচের প্রোগ্রাম ম্যানেজার রাজেশ কুমার অধিকারী মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা ও জনগণের অধিকার সম্পর্কিত তথ্য উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও রোগীর মধ্যে যদি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে না ওঠে, তাহলে স্বাস্থ্যসুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তাই চিকিৎসক ও সেবা প্রদানকারীদের আরও মানবিক আচরণ গড়ে তুলতে হবে এবং জনগণকেও তাদের স্বাস্থ্য অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। 

জনমত গ্রহণের সময় উপস্থিত রোগী, সুশীল সমাজ প্রতিনিধি, এনজিও প্রতিনিধি ও সাংবাদিকরা হাসপাতালের সেবা ব্যবস্থার ভালো দিক ও সীমাবদ্ধতা নিয়ে খোলামেলা মতামত প্রকাশ করেন।

সুশীল সমাজ প্রতিনিধি মো. মাজেদ আলী বলেন, "সরকারি হাসপাতালে যথেষ্ট পরিমাণে ওষুধ আসে, কিন্তু এর সঠিক বণ্টন হয় না। কর্তৃপক্ষ যদি দায়িত্বশীল হয়, তাহলে জনগণের ওষুধ সংকট দূর হবে।"

এনজিও প্রতিনিধি তন্ময় বণিক বলেন, "হাসপাতালে ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তারা চিকিৎসকদের প্রভাবিত করে বাইরের ওষুধ লিখিয়ে নিচ্ছেন, যা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।"

সাংবাদিক মো. জাহেনুর রহমান বলেন, "হাসপাতালকে দুর্নীতিমুক্ত রাখতে হলে প্রশাসনিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন প্রয়োজন। সব প্রকার যন্ত্রপাতি ও ওষুধ ক্রয় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।"

জেলা স্বাস্থ্য অধিকার ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও সলিডারিটির নির্বাহী পরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা এস. এম. হারুন অর রশীদ লাল বলেন, "আমরা ১৯৯২ সাল থেকে কুড়িগ্রামে স্বাস্থ্য অধিকার নিয়ে কাজ করছি। আগের তুলনায় এখন অনেক পরিবর্তন এসেছে। সবাই মিলে সৎভাবে কাজ করলে সদর হাসপাতালের সমস্যাগুলোও সমাধান সম্ভব।"

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. নুর নেওয়াজ আহমেদ বলেন, "এই সভার মাধ্যমে আমি জনগণের চাহিদা ও হাসপাতালের বাস্তব সমস্যাগুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছি। আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, এই হাসপাতালকে জনবান্ধব রূপে গড়ে তুলব এবং অসহায় মানুষের পাশে থাকব।"

সভাপতির বক্তব্যে ডা. এস. এম. আমিনুল ইসলাম বলেন, "বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ ও সলিডারিটির উদ্যোগে স্বাস্থ্যসেবায় ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই হাসপাতালকে জনবান্ধব করে তুলবে।"

বর্তমানে হাসপাতালের সেবায় বেশ কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা টিকিট কাউন্টার চালু করা হয়েছে, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা বেড়েছে, চিকিৎসকেরা সময় নিয়ে রোগী দেখছেন, প্রায় ৬৫ শতাংশ ওষুধ হাসপাতাল থেকেই পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া নতুন চারজন চিকিৎসক যোগদান করেছেন এবং জনবল বৃদ্ধির জন্য সুপারিশ পাঠানো হয়েছে।

অংশগ্রহণকারীরা জনবান্ধব, সাশ্রয়ী ও প্রযুক্তিনির্ভর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার দাবি জানান। তারা অসহায় রোগীদের জন্য শতভাগ ওষুধ সরবরাহ, সব ধরণের পরীক্ষা হাসপাতালে করার ব্যবস্থা, রোগীদের হয়রানি বন্ধ ও ডাক্তার-নার্সদের আচরণে ইতিবাচক পরিবর্তনের আহ্বান জানান।

সভা শেষে সভাপতি ডা. এস. এম. আমিনুল ইসলাম বলেন, "আমরা সকলে মিলেমিশে কাজ করলে এই হাসপাতাল সত্যিকার অর্থেই জনগণের হাসপাতাল হয়ে উঠবে।"
 

Citizen's Voice